রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিপক্ষে ঝড় তুলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন সুনীল নারিন। ভেন্যুর সঙ্গে প্রতিপক্ষ বদলালেও বদলাননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিকেটার। চিন্নাস্বীমাতে যে ঝড় তুলেছিলেন বিশাখাপট্টনমে সেটা বয়ে নিয়ে বেড়ালেন নারিন। ওপেনিংয়ে নেমে ৩৯ বলে খেললেন ক্যারিয়ার সেরা ৮৫ রানের ইনিংস। বাঁহাতি এই ব্যাটারকে সঙ্গ দিয়ে তাণ্ডব চালালেন হাফ সেঞ্চুরিয়ান অঙ্গকৃষ রঘুবংশী। শেষ দিকে আন্দ্রে রাসেলের ১৯ বলে ৪১ এবং রিংকু সিংয়ের ৮ বলে ২৬ রানের ক্যামিওতে কলকাতা নাইট রাইডার্স থেমেছে ২৭২ রানে।
অল্পের জন্য সানরাইজার্স হায়দরাদের ২৭৭ রানের পুঁজি ছাড়াতে না পারলেও বিশাখাপট্টনমে ঠিকই ছক্কা বৃষ্টি নামিয়েছিলেন কলকাতার ব্যাটাররা। ২৭৩ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়ায় ডেভিড ওয়ার্নার, পৃথ্বী শ, মিচেল মার্শরা ছিলেন আসা-যাওয়ার মিছিলে। অধিনায়ক পান্ত এবং ট্রিস্টিয়ান স্টাবস হাফ সেঞ্চুরি করলেও সেটা কেবলই দিলি ক্যাপিটালসের হারের ব্যবধান কমিয়েছে। দিলিকে ১০৬ রানে হারিয়ে এবারের আসরের প্রথম তিন ম্যাচেই জয়ের দেখা পেল শ্রেয়াস আইয়ারের দল।
জয়ের জন্য ২৭৩ রান তাড়ায় শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে দিলি। ঝড়ো শুরু করলেও ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই কলকাতাকে উইকেট এনে দেন বৈভব অরোরা। ডানহাতি এই পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে মিড অনের ওপর দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন পৃথ্বী। তবে বরুণ চক্রবর্তীর ঝাঁপিয়ে পড়ে নেয়া দারুণ এক ক্যাচে ৭ বলে ১০ রানে ফিরতে হয়েছে দিলির ওপেনারকে। তিনে নামা মার্শ রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
স্বদেশী মিচেল স্টার্কের শরীর বরাবর এক ডেলিভারিতে কভার পয়েন্ট দিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার। তবে রমনদীপ সিংয়ের ওপর দিয়ে খেলতে পারেননি। কভার পয়েন্টে দাঁড়িয়ে রমনদীপ ক্যাচ নিতেই সাজঘরে ফিরতে হয় মার্শকে। পরের ওভারে আউট হয়েছেন অভিষেক পোরেলও। বৈভবের শর্ট লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে থাকা নারিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন রানের খাতা খুলতে না পারা এই ব্যাটার। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার আগে আউট হয়েছেন ওয়ার্নারও।
স্টার্কের পঞ্চম স্টাম্পের গুড লেংথ ডেলিভারিতে বটম এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন তারকা এই ওপেনারকে। ওয়ার্নারকে ফিরতে হয় ১৩ বলে ১৮ রানের ইনিংস খেলে। ৩৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর দিলির হাল ধরার চেষ্টা করেন পান্ত ও স্টাবস। তারা দুজনে হাফ সেঞ্চুরি করলেও তা কাজে আসেনি। পান্ত ৫৫ এবং স্টাবস ৫৪ রানে ফিরলে দিলি অল আউট হয়ে যায় ১৬৬ রানে। কলকাতার হয়ে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন বরুণ ও বৈভব। পেসার স্টার্কের শিকার এদিন ২ উইকেট।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে শুরু থেকেই তাণ্ডব চালাতে থাকেন কলকাতার ওপেনাররা। যদিও ফিল সল্টকে বিধ্বংসী হয়ে উঠতে দেননি অ্যানরিখ নরকিয়া। ডানহাতি এই পেসারের ফুলার লেংথ ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টাবসের দারুণ ক্যাচ আউট হয়েছেন ১৮ রানে। যদিও কলকাতার ব্যাটারদের ঝড় থামানো যায়নি। দিলির বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালিয়েছেন নারিন। তাকে দারুণভাবে সঙ্গ দিয়েছেন রঘুবংশী।
তাদের দুজনের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ১ উইকেটে ৮৮ রান তোলে কলকাতা। চার-ছক্কার পসরা সাজিয়ে মাত্র ২১ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন নারিন। হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন ২৫ বলে। এদিকে মাত্র ৪৪ বলে ১০০ রানের জুটি গড়েন নারিন এবং রঘুবংশী। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল নারিনের হাতে। তবে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলা নারিনকে সেঞ্চুরি করতে দেননি মার্শ। ডানহাতি এই মিডিয়াম পেসারের বাউন্সারে উইকেটের পেছনে থাকা পান্তের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ৭ ছক্কা ও ৭ চারে ৮৫ রান করা নারিন।
হাফ সেঞ্চুরির পর ২৭ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলে ফিরেছেন রঘুবংশী। তরুণ এই ব্যাটারকে ফিরিয়েছেন নরকিয়া। এরপর ঝড় তোলেন রাসেল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মারকুটে এই ব্যাটার খেলেছেন ১৯ বলে ৪১ রানের ইনিংস। একেবারে শেষদিকে এসে ৮ বলে অপরাজিত ২৬ রান করেছেন রিংকু। দিন ছয়েক আগে ২৭৭ রান করা হায়দরাবাদকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল কলকাতার সামনে। তবে ইশান্ত শর্মার করা শেষ ওভারে ৮ রানের বেশি নিতে পারেননি ভেঙ্কেটশ আইয়ার ও রিংকু। ফলে ২৭২ রানে থামতে হয় কলকাতাকে।