ছবি সংগৃহীত
ব্রেন ডেথ রোগী সারাহ ইসলামের দান করা কর্নিয়াপ্রাপ্ত দুই রোগী ভালো আছেন। তারা সারাহর কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন। রবিবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ কর্নিয়া গ্রহীতা দুই রোগীর চোখ পরীক্ষা করে এসব জানিয়েছেন। সকালে সারাহর দুটি কর্নিয়া বসানো রোগী শিক্ষিকা ফেরদৌসী আক্তার (৫৬) ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) চোখ পরীক্ষা করেন অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সারাহর মৃত্যু নেই। সারাহর অঙ্গদানের মাধ্যমে দুই জন কিডনি ফেইলিউর রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছেন। তাদের কিডনির কার্যকারিতা শুরু হয়েছে। অন্য দুই জন রোগী যাদের চোখে সারাহর কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তারাও দেখতে পাচ্ছেন। এভাবে সারাহ অঙ্গদান করে চার জনের মাঝে বেঁচে আছেন। তাকে আমরা সবসময় কৃতজ্ঞার সঙ্গে স্মরণে রাখবো। সারাহ যে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তা আমরা সবাই অনুসরণ করতে পারি।’
তিনি বলেন, ‘সারাহর মা শবনম সুলতানাকে আমাদের ক্যাডাভেরিক কার্যক্রমের ব্র্যান্ড অ্যাম্বসেডর করা হবে। দেশে ক্যাডাভেরিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে। এতে অনেক অর্থের সাশ্রয় হবে। একই সঙ্গে অনেক রোগী, যারা জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা নতুন জীবন লাভ করবেন। ভবিষ্যতে বিএসএমএমইউ-তে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টও সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মানুষের জীবন বাঁচাতে অঙ্গদান কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
এ সময় আরও ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, প্রক্টর ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার, কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান, ইউরোলজি বিভাগের সহযোগী ডা. মো. ফারুক হোসেন, সহযোগী অধ্যাপক (সার্জিক্যাল অনকোলজি) ডা. মো. রাসেল, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ, উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দেবাশীষ বৈরাগী প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ১৯ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে সারাহ ব্রেন ডেথ হওয়ার পরপরই তার দুই কিডনি বিএসএমএমইউ’র ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্লান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে সংরক্ষণ করা হয়। একটি কিডনি শামীমা আক্তার নামে এক রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করেন অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল। অপর কিডনিটি বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়।
ফেরদৌসী আক্তারের চোখে অস্ত্রপচারে নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউ’র কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। ২০১৬ সালে এক অজানা ভাইরাসে ফেরদৌসী আখতারের ডান চোখে সমস্যা দেখা দেয়। এরপর তিনি কিছুই দেখতে পেতেন না। স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চোখ দেখালেও সমাধান মেলেনি। পরে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। সাত বছর আগে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক। তবে কর্নিয়া সংকটে এটি এতদিন সম্ভব হয়নি। কর্নিয়া জোগাড় করতে আগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দিয়ে রেখেছিলেন এ শিক্ষিকা। সারাহর কর্নিয়া দানের সম্মতি পেয়েই চিকিৎসক শীষ রহমান ফেরদৌসীকে ফোন করে ঢাকায় আসতে বলেন। এরপর তার ডান চোখে কর্নিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়। ডান চোখে এখন তিনি স্বাভাবিকভাবে দেখতে পাচ্ছেন।
মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন বিএসএমএমইউ’র চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ। মোহাম্মদ সুজন এখন ভালো আছেন।
দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বিএসএমএমইউ’র আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২০ বছরের তরুণী ফাইন আর্টসের মেধাবী শিক্ষার্থী সারাহ। তিনি তার অঙ্গদান করে যান। তার অঙ্গদানের মাধ্যমে চার জন মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন।