জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুককে ‘ম্যাজিক’ বলে উলেখ করেছেন ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। সোমবার (৪ এপ্রিল) এ নিয়ে তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দেন। যা হুবহু তুলে ধরা হলো-
শুরুতেই তসলিমা নাসরিন লেখেন, ‘ফেসবুক একটা ম্যাজিক। ম্যাজিকই বটে। কেন মনে হলো, তা বলছি।’
‘দু’তিন আগে কবি হেলাল হাফিজ আমাকে ইনবক্সে একটি কবিতা লিখে রচয়িতার জায়গায় আমার নাম লিখলেন। কবিতাটি আমার কাছে খুব চেনা মনে হচ্ছে, খুবই চেনা, কিন্তু এই কবিতাটি আমার কোনও কাব্যগ্রন্থে আছে বলে আমার মনে পড়ছে না। আমি আমার কবিতাসমগ্র এনে খুঁজলাম, কোথাও আছে কি না কবিতাটি। না, নেই। হেলাল হাফিজকে বললাম, কবিতাটি আমার লেখা হলে আমার কোনও না কোনও কবিতার বইয়ে থাকতো, কিন্তু নেই।’
‘জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কোথায় পেয়েছেন এই কবিতা? বললেন, তুমি আমাকে বহু বছর আগে একটি বই উপহার দিয়েছিলে, বইয়ে এই লাইন ক’টা লিখে দিয়েছিলে। আমি বললাম, তাহলে আমি কারও কবিতা কোট করেছিলাম হয়তো, কার, সে আমার মনে নেই। আর যদি এটি আমার কবিতা হয়, তাহলে হয়তো আমি ভুলে গেছি কবিতার বইয়ে ঢোকাতে। কিন্তু এরকম হওয়ার কথা নয়, এখন ভুলোমন হলেও তখন তো ভুলোমন ছিল না।’
‘আমার মাথার মাপে এ তোমার বানানো দরজা,
কাঁধের মাপে তুমি।
আমার বুকের মাপে গড়ে দাও দীর্ঘ ভালোবাসা,
পায়ের মাপে ভূমি।’
‘কবিতাটি লিখে গুগল করলাম। শুধু একটি খবর বেরোলো, হেলাল হাফিজ ফেসবুকে কোনো একদিন এই কবিতাটি উলেখ করে আমার নাম লিখেছিলেন। এছাড়া কার লেখা কবিতা এটি এ ব্যাপারে গুগল আমাকে আর কোনো তথ্য দিতে পারলো না। অগত্যা ফেসবুকের আশ্রয় নিলাম। কবিতাটি লিখে পাঠকদের জিজ্ঞেস করলাম, কার লেখা এটি? আমার উদ্দেশ্য, যার লেখা, তার যদি চোখে পড়ে। অথবা কেউ যদি জানে এটি কার লেখা, আমাকে জানাবে। এ অনেকটা কূলকিনারহীন সমুদ্রের গা ঘেঁষা এক নির্জন দ্বীপ থেকে এস ও এস লিখে পতাকা নাড়ানো, কারও যদি চোখে পড়ে।’
‘ঠিকই চোখে পড়লো। কবির নাম কল্যাণ শংকুর। আমি যখন ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৪ সাল অবধি লিটল ম্যাগ আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, লিটল ম্যাগে লিখি, লিটল ম্যাগ সম্পাদনা করি, প্রকাশ করি, তখন দুই বাংলার প্রচুর লিটল ম্যাগ আমার কাছে আসতো। ম্যাগাজিনগুলোর মধ্যে ছিল স্বমচিতা নামের একটি ম্যাগাজিন। সেই স্বমচিতায় ছিল আমার মাথার মাপে এ তোমার বানানো দরজা কবিতাটি। আজ তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায় যোগাযোগ করে জানিয়েছেন তারই ছদ্মনাম ছিল কল্যাণ শংকুর। কবিতাটি ‘‘সপ্তর্ষির আলো’’ সংকলনে তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই আছে।’
‘ফেসবুক ম্যাজিক নয়তো কী? দুদিনেই রহস্য ভেদ করে ফেললো।’