ঢাকা,  বৃহস্পতিবার  ২১ নভেম্বর ২০২৪

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

পবিত্র রমজানে পালনীয় বিশেষ ১০ আমল

প্রকাশিত: ১১:০৫, ৫ এপ্রিল ২০২২

পবিত্র রমজানে পালনীয় বিশেষ ১০ আমল

বছরের পরিক্রমায় আবারও হাজির পবিত্র মাহে রমজান। রমজান মাস সওয়াব অর্জনের বসন্ত মৌসুম। পরকালের পাথেয় হাসিলের সুবর্ণ সময়। পাপী-তাপীদের পাপ মুক্তির মাহেন্দ্রণ।

রমজানের ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের দুয়ারে উপস্থিত হয়েছে। পুরো মাস রোজা পালন আল­াহ তোমাদের জন্য ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজা উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়; বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো।

দুষ্ট শয়তানদের এ মাসে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেওয়া হয়। এ মাসে আল­াহ কর্তৃক একটি রাত প্রদত্ত হয়েছে, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে (মহাকল্যাণ থেকে) বঞ্চিত হলো।’ (তিরমিজি : ৬৮৩)। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের এ মাসে গুরুত্বপূর্ণ অনেক আমল রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বাপো ১০টি আমল হলো-

রোজা পালন
ইসলামের পাঁচ রুকনের অন্যতম রুকন রোজা। আর রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। সেজন্য রমজানের প্রধান আমল- সুন্নাহ মোতাবেক রোজা পালন করা। মহান আল­াহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে মাসটিতে উপস্থিত হবে, সে যেন তাতে রোজা রাখে।’ (সুরা বাকারা : ১৮৫)। রোজা রাখার ফজিলত সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ইখলাস নিয়ে অর্থাৎ একনিষ্ঠভাবে আল­াহকে সন্তুষ্টি করার জন্য রমজানে রোজা পালন করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি : ২০১৪)। অন্য হাদিসে আছে- ‘যে কেউ আল­াহর রাস্তায় (অর্থাৎ শুধু আল­াহকে খুশি করার জন্য) এক দিন রোজা পালন করবে, তা দ্বারা আল­াহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা পরিমাণ দূরবর্তী স্থানে রাখবেন।’ (মুসলিম : ২৭৬৭)

জামাতে নামাজ আদায়
রমজান মাসে ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমল। অনেকে ফরজ নামাজ আদায়ে উদাসীন থাকেন, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় নামাজ মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরজ।’ (সুরা নিসা : ১০৩)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে- ‘অতএব সেই নামাজ আদায়কারীদের জন্য দুর্ভোগ, যারা নিজেদের নামাজে অমনোযোগী।’ (সুরা আলমাউন : ৪-৫)। এ বিষয়ে হাদিসে এসেছে- আব্দুল­াহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল­াহর নবী! কোন আমল জান্নাতের অতি নিকটবর্তী? তিনি বললেন, সময়মতো নামাজ আদায় করা।’ (মুসলিম : ২৬৩)

সেহরি খাওয়া
রোজা পালনে সেহরি খাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেহরি খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে। অনেকে সেহরি খান না, অনেকে আগ রাতে খেয়েই শুয়ে পড়েন। এটা সুন্নাহ পরিপন্থি। হাদিসে এসেছে, ‘সেহরি হলো বরকতময় খাবার। তাই কখনও সেহরি খাওয়া বাদ দিয়ো না। এক ঢোক পানি পান করে হলেও সেহরি খেয়ে নাও। কেননা সেহরির খাবার গ্রহণকারীকে আল­াহ তায়ালা ও তার ফেরেশতারা স্মরণ করে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১১১০১)

ইফতার করা ও করানো
রোজার পূর্ণ সওয়াব অর্জনের জন্য দ্রুত ইফতার করতে হবে। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করার বিরাট ফজিলত। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সিয়াম পালন করবে, সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে, খেজুর না পেলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি হলো অধিক পবিত্র।’ (আবু দাউদ : ২৩৫৭)। অন্য হাদিসে হজরত আবু জর (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দ্বীন বিজয়ী হবে- যে পর্যন্ত মানুষ দ্রুত ইফতার করবে। কারণ ইহুদি-নাসারারা তা বিলম্বে করে।’ (আবু দাউদ : ২৩৫৫)। অপরকে ইফতার করানোও একটি বিরাট সওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা উচিত। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, সে তার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে, তাদের উভয়ের সওয়াব হতে বিন্দুমাত্র হ্রাস করা হবে না।’ (ইবনে মাজা : ১৭৪৬)

তারাবির নামাজ পড়া
তারাবির নামাজ আদায় রমজান মাসের অন্যতম আমল। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব হাসিলের আশায় রমজানে কিয়ামু রমজান (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি : ২০০৯)। তারাবির সালাত তার হক আদায় করে অর্থাৎ ধীরস্থিরভাবে আদায় করতে হবে। তারাবি জামাতের সঙ্গে আদায় করা সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত। হাদিসে আছে, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে প্রস্থান করা অবধি সালাত (সালাতুত তারাবি) আদায় করবে, তাকে পুরো রাত কিয়ামুল লাইলের সওয়াব দান করা হবে।’ (আবু দাউদ : ১৩৭৭)

কোরআন তেলাওয়াত
রমজান মাসে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কোরআন। তাই এ মাসে অধিক পরিমাণে কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা উচিত। কোরআন কেয়ামতের দিন আমাদের মুক্তির জন্য সুপারিশ করবে। হজরত আবদুল­াহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, আল­াহর রাসুল সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেছেন, ‘রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে আমার পালনকর্তা আমি তাকে দিনের বেলা পানাহার ও যৌনবাসনা চরিতার্থ করা হতে বিরত রেখেছি। সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। আর কোরআন বলবে, হে আল­াহ! আমি তাকে রাতের বেলা ঘুম হতে বিরত রেখেছি। সুতরাং তুমি তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করো। মহানবী সাল­াল­াহু আলাইহি ওয়া সাল­াম বলেন, তখন কোরআন ও রোজার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

লাইলাতুল কদর তালাশ
রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর : ৪)। রাসুল (সা.) আমাদের শেষ দশ দিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ। (বুখারি : ২০২০)। অথচ আমরা সেই দশ দিন ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকি, যা রমজানের আদবের পরিপন্থি।

ইতিকাফ করা
ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কোরআন তেলাওয়াত, দোয়া, ইস্তেগফার ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে আল­াহ তায়ালার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদতের এত মর্যাদা যে, রাসুলুল­াহ (সা.) রমজানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবিগণ ইতিকাফ করতেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘প্রত্যেক রমজানেই তিনি শেষ দশ দিন ইতিকাফ করতেন। কিন্তু জীবনের শেষ রমজানে তিনি ইতিকাফ করেছিলেন বিশ দিন।’ (বুখারি : ২০৪৪)। উলে­খ্য, দশ দিন ইতেকাফ করা সুন্নত।

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া
রমজান মাসে নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। রমজান ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমজানের কারণে এ ফজিলত বহুগুণে বেড়ে যায়। যেহেতু সেহরি খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমজান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- নবী (সা.) বলেছেন, ‘ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হলো রাতের নামাজ অর্থাৎ তাহাজ্জুদের নামাজ।’ (মুসলিম : ২৮১২)

জাকাত প্রদান ও দান করা
পুণ্য অর্জনের মাস রমজান। রোজা-নামাজ ইত্যাদির পাশাপাশি দান-সদকার মাধ্যমেও ফজিলত অর্জন করতে হবে। এ মাসে বেশি বেশি দান-সদকা করার চেষ্টা করা চাই। এতিম, বিধবা ও গরিব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া চাই। যাদের ওপর জাকাত ফরজ তারা হিসাব করে এ মাসে জাকাত দেওয়া। কেননা রাসুলুল­াহ (সা.) এ মাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করতেন। আব্দুল­াহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, ‘রাসুল (সা.) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দানশীল আর রমজানে তাঁর এ দানশীলতা আরও বেড়ে যেত।’ (বুখারি : ১৯০২)

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন