ঢাকা,  রোববার  ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আয়োজনে পুরস্কার জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের একা

মিথিল ফেরদেীস জোছনা

প্রকাশিত: ১১:৪০, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের আয়োজনে পুরস্কার জিতে নিয়েছে বাংলাদেশের একা

অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দলছবি: সংগৃহীত

গ্লোবাল স্টুডেন্ট রিসার্চ কনফারেন্স, নাম শুনে নিশ্চয় অনুমান করা যায়, এটি শিক্ষার্থীদের গবেষণার একটি বৈশ্বিক সম্মেলন। ৪-৬ ফেব্রুয়ারি এই আসর বসেছিল সৌদি আরবের কিং ফাহাদ ইউনিভার্সিটি অব পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলসে। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিই আমরা চারজন। নটর ডেম কলেজ থেকে আমি ও আবরার শহীদ, সেন্ট জোসেফ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে আরেফিন আনোয়ার এবং একাডেমিয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের রাফিদ আহমেদ। সবাই একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। আমাদের গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দলের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন।

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, গণিত এবং ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবন ও পারস্পরিক সহযোগিতার মানসিকতাকে উদ্বুদ্ধ করাই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। ২৫টি দেশের প্রায় দেড় হাজার গবেষণা থেকে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্বাচিত হয় ৩০০টি গবেষণা। সেখান থেকে ৬টি বিভাগে দেওয়া হয় ৬টি পুরস্কার। এর মধ্যে স্মার্ট সিস্টেমস, রোবোটিকস, অটোমেশন ও এআই খাতে পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয় আমাদের গবেষণা। জানিয়ে রাখি, এই দল নিয়ে গত বছর আমরা অংশ নিয়েছিলাম সৌদি আরবে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অলিম্পিয়াডে। বাংলাদেশের হয়ে এনেছিলাম দুটি রৌপ্য ও দুটি ব্রোঞ্জপদক। সেবারই উপলব্ধি করি, বাংলা ভাষায় এআই ও ডেটা সায়েন্স শেখার যথাযথ সম্বল আমাদের হাতে নেই। তাই এ–বিষয়ক ধারণাগুলো সহজ করে তুলে ধরতে পারবে, এমন একটি প্ল্যাটফর্মের চাহিদা টের পাচ্ছিলাম। সেই ভাবনা থেকেই জন্ম হয় আমাদের উদ্যোগ—ইনসিগনিয়ার (ইনসিগনিয়া স্কুল)। এআই ও ডেটা সায়েন্সের কাঠখোট্টা গাণিতিক হিসাবগুলোকে সহজ-সরল ভাষায়, গল্পে গল্পে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের কাছে তুলে ধরাই আমাদের লক্ষ্য।

তবে এর পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা করা যায় কি না, তা-ও ছিল বিবেচনায়। একপর্যায়ে মৃগী রোগের উপসর্গ নিয়ে কাজ শুরু করি আমরা। প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনার জন্য বি এম মইনুল হোসেন স্যারের শরণাপন্ন হই।

এই পুরস্কার প্রাপ্তি আসলে প্রমাণ করে, কোনো কাজের প্রতি আগ্রহ থাকলে এবং সে অনুযায়ী পরিশ্রম করলে স্বীকৃতি মিলবেই। এ দলটি বিভিন্ন সময় আমার কাছে এসে অনুরোধ করত কাজ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতে। সেটি ঢাকার হাসপাতাল হোক কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী হিসেবে তারা কতটুকু অগ্রসর হতে পারবে, তা নিয়ে আমারও সন্দেহ ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট বিরতিতে ওরা যখন কাজের অগ্রগতি দেখাত, তখন বুঝতে বাকি থাকত না, উপযুক্ত নির্দেশনা পেলে তারা অনেক দূর যাবে। সম্মেলনে ওদের উপস্থাপনা শেষে আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী ডিন অবাক হয়ে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ যে এসব ক্ষেত্রে এত দূর এগিয়ে গেছে, এটা আমাদের কল্পনায়ও ছিল না। এ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা কীভাবে এত দারুণ কাজ করে!’

বি এম মইনুল হোসেন, অধ্যাপক, তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মজার ব্যাপার হলো, আমাদের কাজ দেখে আয়োজকেরা এতই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে ‘হাইস্কুল’ পর্যায়ের একমাত্র দল হিসেবে আমাদের অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করেন তাঁরা। জানতাম, আমরাই এ আয়োজনের ‘সবচেয়ে ছোটদের দল’, তাই কোনো ধরনের স্বীকৃতির প্রত্যাশা করিনি। শুধু নিজেদের সেরাটা দিতে চেষ্টা করেছি। এমন একটি পরিধানযোগ্য ক্যাপ তৈরির সমাধান দিয়েছি আমরা, যা মৃগী রোগীদের খিঁচুনি শুরু হওয়ার আগেই পূর্বাভাস দিতে সক্ষম হবে। আমাদের ব্যবহৃত পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ মৌলিক, যা সামান্য পরিবর্তনও ধরতে সক্ষম। আমাদের বিশ্বাস, এই উদ্ভাবন মস্তিষ্কের সংকেত প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে।

সম্ভবত এর গুরুত্ব অনুধাবন করেই স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি, ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডন, কাইস্টের শিক্ষার্থী-গবেষকদের ছাড়িয়ে আমাদের গবেষণাপত্রটিকে একটি বিভাগে ‘সেরা গবেষণাপত্রের’ স্বীকৃতি জিতে নেয়। পুরস্কার হিসেবে আমরা পাই ৬ হাজার সৌদি রিয়াল (প্রায় ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা)।

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন