ফাইল ছবি
চলতি বছরের মার্চে মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের (এমএফএস) মাধ্যমে রেকর্ড ১.৪৮ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, দেশে এমএফএস চালু হওয়ার পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ মাসিক লেনদেন।
সংশ্লিষ্টদের মতে- মোবাইল ব্যাংকিং পরিষেবার সম্প্রসারণ, রমজান ও ঈদের কেনাকাটার মৌসুমে আত্মীয়-স্বজনদের কাছে টাকা পাঠানোর কারণে মোবাইলে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আগের মাস ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ১৮,১৯৫ কোটি টাকা বেশি বা ১৪ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে এই মাধ্যমে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে ২০২৩ সালের জুনে। সেই সময়ে এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ১.৩২ লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া এমএফএসের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ১ লাখ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে ২০২২ সালের এপ্রিলে, সে সময়ে লেনদেন হয়েছে ১.০৭ লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য বলছে- দেশে বর্তমানে বিকাশ, রকেট, ইউক্যাশ, মাই ক্যাশ, শিওর ক্যাশসহ বিভিন্ন নামে ১৩টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।
খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহর কিংবা গ্রামে– এক মুহূর্তে দেশের যেকোনো স্থানে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। দিন দিন গ্রাহক সংখ্যা যেমন বাড়ছে, লেনদেনের পরিমাণও তেমনি বাড়ছে।
২০২৪ সালের মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ২২ কোটি ৪০ লাখের বেশি। এর মধ্যে শহরে গ্রাহক আছে ৯ কোটি ৭৭ লাখ। এ ছাড়া গ্রামে রয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ। এসব অ্যাকাউন্টের মধ্যে পুরুষ ১৩ কোটি এবং নারী গ্রাহক ৯ কোটি।
এ বিষয়ে বিকাশের করপোরেট কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, মার্চে ক্যাশ আউট, ক্যাশ ইন, মার্চেন্ট পেমেন্ট, স্যালারি ডিসবার্সমেন্ট পূর্বের সকল সময়ের তুলনায় বেশি হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে রোজা ও ঈদ। সাধারণত, আমাদের স্বজনরা অন্য সময় না পাঠালেও ঈদের সময়ে কিছু কিছু পরিমাণে খরচ মেটানোর জন্য টাকা পাঠিয়ে থাকেন।
তিনি বলেন, এই সময়ে অনেক গার্মেন্টস মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্যালারি পাঠিয়েছে। এ ছাড়া এই সময়ে কেনাকাটায় ব্যাপক লেনদেন হয়েছে।
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিশেষ করে সরকারি সব ধরনের ভাতা, উপবৃত্তি ও প্রণোদনা বিতরণে মোবাইল আর্থিক সেবা খাত ব্যবহারের সিদ্ধান্ত এ খাতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আরও বাড়িয়েছে, যোগ করেন তিনি।
নগদের একজন কর্মকর্তা বলেন, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে নগদের সেবা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। আমরা গ্রাহকদের চাহিদার আলোকে নতুন নতুন সেবা চালু করছি। এ ছাড়া মানুষজন এখন ব্যাংকে গিয়ে লাইনে না দাঁড়িয়ে সহজেই এমএফএসের মাধ্যমে তাদের প্রিয়জনদের টাকা পাঠিয়ে দিতে পারছেন। আমরা মনে করি, সামনের সময়ে এটি আরও জনপ্রিয় হবে।
এপ্রিলে প্রায় প্রতিদিন গড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার মতো লেনদেন হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ডিজিটাল কেনাকাটায় গ্রাহকদের বিভিন্ন অফার দেওয়া হয়েছিল, ফলে লেনদেনের পরিমাণ আরও বেড়েছে, যোগ করেন তিনি।
২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্যদিয়ে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়।
এরপর ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এরপরে রয়েছে নগদ।