ক্ষুদ্র ঋণের আওতায় সরকারের সহায়তা অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলো সহায়তা দিয়ে যাবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ক্যাশলেস সোসাইটি করতে চাই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সিরডাপ অডিটরিয়ামে ‘মাইক্রোফাইন্যান্স ইন বাংলাদেশ (অ্যানুয়াল স্টাটিস্টিক)’ শীর্ষক প্রকাশনার উপর একটি জাতীয় ওয়ার্কশপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ওয়ার্কশপে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উলাহ এবং সভাপতিত্ব করেন মাইক্রো রেগুলেটরি অথরিটির (এমআরএ) এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারম্যান মো. ফসিউলাহ। এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন অথরিটির নির্বাহী পরিচালক লক্ষণ চন্দ্র দেবনাথ। ওয়ার্কশপের বিষয়বস্তুর উপর বিস্তারিত উপস্থাপনা করেন অথরিটির পরিচালক মোহাম্মদ ইয়াকুব হোসেন।
গভর্নর বলেন, ইতিমধ্যে বিনিময় চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে রিয়েল টাইমে টাকা পাঠানো ও গ্রহণ করা যাবে। এনজিওগুলোকে প্রফিট মোটিভ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন ৯০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়। করোনার মধ্যেও মাইক্রো ক্রেডিটকে সামনে রেখে প্রচুর অর্থের যোগান দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এমআরএর অ্যানুয়াল স্টাটিস্টিকসে যেসব বিষয় উঠে এসেছে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধুর সময়ই জামানতবিহীন ঋণ চালু হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে এটি বিকশিত লাভ করে। ক্ষুদ্র ঋণের বিষয়ে সবধরনের সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
এ সময় চারটি ই-সেবা উদ্বোধন করেন গভর্নর। এগুলো হলো: ই-কিপিং, এমআরএর লাইব্রেরি অটোমেশন, ই-আর্কাইভিং এবং এমআরএ ইনফো এপ্লিকেশন।
এমআরএর পরিচালক ইয়াকুব হোসেন বলেন, ১৯৭৪ সালে সর্বপ্রথম মাইক্রো ফাইন্যান্স চালু হয়। চলতি বছরের জুন শেষে দেশে ৭৩৯টি মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর ২৩ হাজার ৫৪৩টি শাখা রয়েছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ২৭ মিলিয়ন। ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি সাইজের প্রতিষ্ঠানগুলোর ফান্ড কম। একই সঙ্গে রয়েছে দক্ষ জনবলের অভাব। এগুলোর পরিচালন ব্যয় কমানোর দিকে মনযোগী হতে হবে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহিম খান বলেন, গ্রামীণ ব্যাংকের আমানত ২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। প্রতিদিন ১০০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়। এই ব্যাংকের সদস্যদের ছেলে-মেয়েরা চাকরি না পেলে ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিয়ে থাকি আমরা। এছাড়া এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ভিক্ষুককে অর্থসহয়তা দিয়ে ভিক্ষা করা থেকে ফিরিয়েছি। এরা মারা গেলে ঋণ মওকুফ হয়ে যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ইনফর্মেশন বিভাগের অধ্যাপক মাসুদুর রহমান বলেন, এই খাতে ফান্ডের ঘাটতি থাকার কথা না। নিশ্চয়ই ফান্ড কোথাও আটকে যাচ্ছে। এছাড়া এখানে প্রচুর জনবল রয়েছে। খাতটিতে অনেক অব্যবস্থাপনা রয়েছে। প্রান্তিক এলাকায় ঋণের পরিমাণ বাড়াতে হবে। কোন ব্যাংকগুলো এই খাতে অর্থ সরবরাহ করছে তা দেখতে হবে। একই সঙ্গে প্রভিশন রাখা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখতে হবে।
এ সময় প্যানেল আলোচকরা বলেন, মাইক্রো ফাইন্যান্স খাতের সুদের হার নিয়ে আলোচনা করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এমএফএসের তুলনা করলে হবে না। এই খাতটিতে ফান্ড একটি বড় সমস্যা। প্রথম দিকে জিরো কুপন বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। মাইক্রো ফাইন্যান্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঞ্চয় ৪০ শতাংশ, অপরদিকে গ্রামীন ব্যাংকের ১২০ শতাংশ।
এছাড়া উন্মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, এনজিওতে কোনো খেলাপি ঋণ নেই। ব্যাংকগুলো যেখানে যায়না আমরা সেখানে কাজ করি। ৩৪ শতাংশের বেশি সুদ নেওয়া হয়না। এই খাতে কোনো অব্যবস্থাপনা নেই। বিভিন্ন দেশের তুলনায় আমরা কম সুদ নেই। ফিলিপাইনে ৬০ শতাংশ সুদ দিতে হয় এবং ভারতে ৩০ শতাংশ। খরচ কমাতে না পারলে সফলতা পাওয়া যাবে না।