‘আমার জীবন আমার সম্পদ বিমা করলে থাকবে নিরাপদ’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামী বুধবার (১ মার্চ) সারাদেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় বিমা দিবস পালন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে দিবসটির উদ্বোধন করবেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) সমন্বয়ে জাতীয় বিমা দিবস পালন হবে।
সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আইডিআরএ কার্যলয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী জানান, জাতীয় বিমা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উলাহ, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারী এবং বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।
তিনি আরও জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতিতে নিষিদ্ধ থাকাকালে সর্বস্তরের জনগণকে সংগঠিত করার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ১৯৬০ সালের ১ মার্চ তৎকালীন আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে এ অঞ্চলের প্রধান হিসেবে যোগ দেন। তারিখটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সরকার ১ মার্চকে ‘জাতীয় বিমা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে বিমা কোম্পানির সংখ্যা এখন ৮১টি। এরমধ্যে লাইফ বিমা কোম্পানি আছে ৩৫টি। আর নন-লাইফ বিমা ৪৬টি। গত কয়েক বছরে নানামুখী সংকটের মধ্যেও জীবন বিমার তহবিল ও সাধারণ বিমার সম্পদ দুটোই বেড়েছে। এমনকি ২০২১ সালে করোনা মহামারির সময়ও বিশ্বজুড়ে মোট বিমা প্রিমিয়ামের প্রকৃত প্রবৃদ্ধি যেখানে ৩ দশমিক ৪ ভাগে নেমে এসেছিলো, সেখানে বাংলাদেশে বিমা প্রিমিয়ামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ভাগ। যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক শূন্য ৪ ভাগ।
জয়নুল বারী বলেন, ২০২২ সালের শেষে গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এরমধ্যে লাইফ বিমার গ্রস প্রিমিয়ামের পরিমাণ ১১ হাজার ৩৯৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আর নন লাইফে এ পরিমাণ ৫ হাজার ৪১৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। যা সংকটের এই সময়ে দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় তারল্যের জোগান দিচ্ছে।
তিনি বলেন, লাইফ ও নন-লাইফ বিমা কোম্পানির অর্জিত প্রিমিয়ামের ওপর ২০২২ সালে ১ হাজার ৩০৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ভ্যাট ও ট্যাক্স সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। বিগত বছরে লাইফ এবং নন-লাইফ বিমা কোম্পানিগুলো সম্মিলিতভাবে ১৯ কোটি ১২ লাখ ৮৬৯টি বিমা দাবি নিষ্পত্তি করেছে।
তিনি আরও বলেন, এসময়ে দেশের অর্থনীতিতেও এই খাতের অবদান বেড়েছে। দেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ বিমার সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং কর্মসংস্থান হয়েছে কয়েক লাখ মানুষের।
আইডিআরএ চেয়ারম্যান বলেন, বিমা খাতে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনের উদ্দেশে সরকারের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে আইডিআরএ। বিমা শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশের ল্যমাত্রা অর্জনের ল্েয আইডিআরএ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিমা খাতের উন্নয়নের জন্য ১১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকার সরকারি অর্থায়ন এবং বিশ্বব্যাংকের ৫১৩ কোটি ৫০ লাখ টাকাসহ মোট ৬৩২ কোটি টাকার অর্থায়নে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রকল্পের সরকারি অর্থায়ন ১১৮ কোটি ৫০ লাখ থেকে ২৫ কোটি টাকা হ্রাস করা হয়েছে এবং ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৩২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে প্রায় ৬৭২ কোটি টাকা হয়েছে। আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমি, সাধারণ বিমা করপোরেশন এবং জীবন বিমা করপোরেশনকে পেশাদারত্ব এবং প্রযুক্তিগত সক্ষমতা আরও বাড়ানো হবে।