ছবি সংগৃহীত
টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সীমান্তবর্তী জেলা শেরপুরের চারটি পাহাড়ি নদীর উজানে পানি কমতে শুরু করলেও ভাটি এলাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নতুন করে বন্যার পানি ঢুকেছে শেরপুর সদর ও নকলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে।
এ নিয়ে জেলার পাচঁ উপজেলার ৩৩টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় দুই লাখ মানুষ।
এদিকে নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও নকলায় বন্যার পানিতে ডুবে দুই ভাইসহ এ পর্যন্ত মারা গেছে সাতজন।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছানোয়ার হোসেন মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ভারী বর্ষণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় শেরপুরের নালিতাবাড়ীর খলিশাকুড়া আন্ধারুপাড়ার ইদ্রিস আলী (৬৬), নিশ্চিন্তপুর কুতুবাকুড়া গ্রামের দুই ভাই হাতেম আলী (৩০) ও আলমগীর হোসেন (১৬)। বাঘবেড় বালুরচরের অমিজা খাতুন (৪৫), পোড়াগাওঁ ইউনিয়নের বাতকুচি গ্রামের জহুরা খাতুন (৭০), নকলা উপজেলার উরফা ইউনিয়নে কুড়েকান্দা গ্রামের মুক্তার হোসেন (৫০) বন্যার পানিতে ডুবে এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন।
এ ছাড়া ঝিনাইগাতীর সন্ধাকুড়া থেকে একজনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তবে তার পরিচয় পাওয়া যায়নি।
এদিকে সেনাবাহিনী, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, বিএনপি, জামায়াত ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে অভিযান চললেও পানির প্রবল স্রোত আর পর্যাপ্ত নৌযানের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।
গতকাল শনিবার রাত থেকে প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। নকলা পৌর এলাকাসহ পুরো উপজেলাই প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ঘরের চালে, সিলিংয়ে ও মাচায়। বন্যায় বাড়িঘর ডুবে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে আসা এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, তিন দিন ধরে বন্যা হলেও এখনও ত্রাণ পাননি তারা। এ পর্যন্ত বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে সাতজন। এ ছাড়াও নিখোঁজ রয়েছে অনেকে।
আজ রবিবার (৬ অক্টোবর) সকাল ৯ টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শেরপুর নাকুগাঁও স্থলবন্দর স্থবির হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে জেলার অধিকাংশ সড়ক। বিধ্বস্ত হয়েছে অসংখ্য গ্রামীণ পাকা ও কাঁচা সড়ক। পানিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন ও উঠতি আমনের ক্ষেত। বিভিন্ন স্থানে বানের পানিতে ধসে ও ভেসে গেছে কাঁচা ঘর-বাড়ি। পানিতে ভাসছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র। এসব এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কিছু আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হলেও তা চাহিদার তুলনায় অপর্যাপ্ত। সরকারিভাবে শুকনো খাবার দিলেও পাচ্ছে না প্রকৃতবানবাসী মানুষ, ত্রাণের জন্য কন্ট্রোল রুম খুললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের যোগাযোগ করে পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
জেলার ভোগাই নদীর পানি ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং চেল্লাখালীর ৫৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়াও অপর দুটি পাহাড়ি নদী মহারশি ও সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। এদিকে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, মৃগী ও দশানী নদীর পানি।