ছবি সংগৃহীত
খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহর (৪৪) বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন, অঙ্গহানি ও হুমকির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
বুধবার (১ মার্চ) নগরীর সোনাডাঙ্গা মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন এক শিশু রোগীর মা।
মামলার অপর আসামি হলেন হক নার্সিং হোমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল হক ফকির (৬০)।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ ঘটনায় খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী। এসময় তার মেয়ে ও শাশুড়ি উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী বলেন, তার স্বামী একজন সরকারি চাকরিজীবী। বর্তমান কর্মস্থল সাতক্ষীরা। ২০১৮ সালে আগুনে তার মেয়ের (৬) বাম হাতের আঙুল পুড়ে গেলে চিকিৎসা করান। পরে অবস্থার অবনতি হলে ২০২২ সালের ২১ আগস্ট শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. শেখ নিশাত আব্দুল্লাহকে দেখান। তিনি মেয়ের হাতের আঙুল অপারেশন করানোর কথা বলেন।
তিনি আবু নাসের হাসপাতালে অপারেশন না করে তার পরিচিত ময়লাপোতা হক নার্সিং হোম থেকে করোনার পরামর্শ দেন। কারণ তিনি হক নার্সিং হোমে রোগী দেখেন ও অপারেশন করেন। পরে গত ১৭ জানুয়ারি মেয়েকে নার্সিং হোমে ভর্তি করেন।
ভুক্তভোগী আরও বলেন, অপারেশন করার পর দিন দিন মেয়ের হাতের আঙুল কালো হতে থাকে। এ বিষয়ে চিকিৎসক শেখ নিশাত আব্দুল্লাহকে বললে তিনি আঙুলের ছবি হোয়াটসঅ্যাপে দিতে বলেন। পরে নিজের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে ওই চিকিৎসকের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ছবি পাঠান। পরবর্তী সময়ে চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ মেয়ের চিকিৎসার সুযোগ নিয়ে তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। ‘ড্রেসিংয়ের জন্য নয়, আপনাকে একাই আসতে বলছি’সহ বিভিন্ন আপত্তিকর মেসেজ পাঠাতে থাকেন।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি মেসেজ পাঠিয়ে ড্রেসিং করানোর জন্য মেয়েকে নিয়ে হক নার্সিং হোমের চেম্বারে যেতে বলেন চিকিৎসক নিশাত আব্দুল্লাহ। পরে মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে গেলে চিকিৎসক নিশাত তাকে বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে হাত ধরে টেনে তার কাছে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ওই নারী মেয়েকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়ে আসেন।
ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মেয়ের হাতের আঙুল ব্যান্ডেজসহ খুলে পড়ে। পরে চিকিৎসক নিশাতকে বিষয়টি ফোনে জানিয়ে হক নার্সিং হোমে যান। সেখানে শিশুটির চিকিৎসা করতে অনীহা প্রকাশ করেন চিকিৎসক নিশাত। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানান ওই নারী। পরে পুলিশ সেখানে গেলে তিনি আঙুল ব্যান্ডেজ করে দেন।
অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করিতে না পেরে অন্যান্য আসামিদের যোগসাজশে চিকিৎসক নিশাত তার মেয়ের বাম হাতের আঙুলে গুরুতর আঘাত করে স্থায়ীভাবে বিকলাঙ্গ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ ওই নারীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ শেখ আবু নাসেরের পরিচালক ডা. আবু শাহিন বলেন, অফিশিয়ালি এখনো কিছু জানি না। ঘটনাটি ঘটেছে বাইরে। তবে ডা. নিশাত আমাকে কিছু জানাননি। তিনি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কাছে সব জানিয়েছেন। তারা পদক্ষেপ নিয়েছেন।