ঢাকা,  শনিবার  ২৩ নভেম্বর ২০২৪

নিউজ জার্নাল ২৪ :: News Journal 24

দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট

নিউজ জার্নাল ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

দেড় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা ইসলামী ব্যাংকের এজেন্ট

ছবি সংগৃহীত

বাগেরহাটে গ্রাহকের দেড় কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. এর যাত্রাপুর বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদী। 

রবিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে গ্রাহকরা সদর উপজেলার যাত্রাপুর বাজারস্থ এই ব্যাংকের কার্যালয়ে ভিড় করেন। অনলাইনে নিজের হিসেবে টাকা দেখতে না পেয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। 

এজেন্ট ব্যাংকিং ইনচার্জ ও অন্যান্য কর্মচারীদের কাছে নিজেদের জমা রাখা টাকা দাবি করেন গ্রাহকরা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে প্রতারক উদ্যোক্তার নামে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

গ্রাহকদের দাবি, ইসলামী ব্যাংকের সুনাম থাকায় তারা এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটে টাকা ফিক্সডিপোজিট করেছিলেন। ব্যাংক থেকে জমা রশিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদি এই টাকা মূল শাখায় জমা না দিয়ে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। হাদিউজ্জামানকে আটক করে টাকা আদায় করার দাবি জানান তারা।

সাবানা বেগম নামের এক নারী গ্রাহক বলেন, ‘সাড়ে চার লাখ টাকা রেখেছিলাম ব্যাংকে। এই টাকার লাভে আমার সংসাসের অনেক খরচ চলত। কিন্তু ব্যাংকে এসে জানলাম আমার হিসেবে কোনো টাকা জমা নেই। আমাদের কোনো আয় নেই, স্বামী পঙ্গু হাটতে পারেন না। এখন আমাদের কিভাবে চলবে।’

যাত্রাপুর এলাকার মনোয়ারা বেগম নামের আরেক নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘চাচা, ফুপু ও আমার মিলে ২৩ লাখ টাকা আছে এই ব্যাংকে। হিসেবে দেখছি কোনো টাকা নেই। এত টাকা হারিয়ে পরিবারের সবাই এখন খুবই চিন্তিত। কি হবে জানি না।’

বাগদিয়া এলাকার আজিজুল হক নামের এক কৃষক বলেন, ‘৫০ হাজার টাকা রেখেছিলাম। এখন শুনছি টাকা নেই। এভাবে হলে কিভাবে আমরা টাকা পয়সা সঞ্চয় করব।’

চাপাতলা এলাকার মিনারা বেগম নামের এক গ্রাহক বলেন, ‘এক লাখ ১০ টাকা রেখেছিলাম। কিন্তু টাকা পাচ্ছি না। এ ভাবে আমাদের টাকা উদ্যোক্তা আত্মসাৎ করেছে। এ বিষয়টি ব্যাংকের ইনচার্জ বা ক্যাশিয়ার কখনও আমাদের জানাননি। এটা আমাদের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।’

এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ইনচার্জ মো. আব্দুল হালিম বলেন, ‘এই শাখা পাঁচ বছর ধরে চলছে। তানিশা এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধীকারী হাদিউজ্জামান হাদি এই আউটলেট নেন। আমাদের ২৬০০ এর মত গ্রাহক রয়েছে। যাদের ডিপোজিটের পরিমাণ ৬ কোটি টাকার উপরে। এসব গ্রাহকের জমা দেওয়া টাকা আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকে জমা দিয়েছি। কিন্তু কিছু সংখ্যক গ্রাহকদের টাকা ব্যাংকের উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামান হাদী নিজে নিয়ে অন্য খাতে ব্যয় করেছেন। এই টাকার বিপরীতে উদ্যোক্তা নিজে এবং আমাদের দিয়ে গ্রাহকদের ব্যাংকের সিলিপ দিয়েছেন। উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের নেওয়া গ্রাহকদের টাকার পরিমাণ দেড় কোটির মত হতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘হাদিউজ্জামান প্রায় দুই মাস ধরে ব্যাংকে আসেন না। গ্রাহকরা টাকা নিতে আসলে অন্য গ্রাহকদের টাকা দিয়ে সমন্বয় করতে বলেন। আমরা সেভাবেই করেছি। সর্বশেষ কয়েকদিন আগে অনেক চেষ্টা করে তার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে বলেছে যতদ্রুত সম্ভব জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা পরিশোধ করে দিবেন।’

আব্দুল হালিম আরও বলেন, ‘কিছু গ্রাহক আছেন যারা অতিরিক্ত লাভের আশায় ব্যাংকে টাকা না রেখে উদ্যোক্তা হাদিউজ্জামানের সঙ্গে চুক্তি করে টাকা রেখেছেন। লাভও নিয়েছেন। এসব গ্রাহকের বিষয়ে আমরা ঠিকঠাক জানি না। এখন লাপাত্তার খবর শুনে তারা এসেছেন।’

এ দিকে হাদিউজ্জামান হাদি ও তার পরিবারের লোকজন কয়েকদিন ধরে এলাকা ছাড়া রয়েছেন। তার মুঠোফোনটিও বন্ধ পাওয়া যায়।

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লি. বাগেরহাট শাখার ব্যবস্থাপক এ্যাসিষ্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা বাগেরহাট মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।’

তিনি বলেন, ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এখানে ফিংগার প্রিন্টের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেন করতে হয়। এ বিষয়টি ব্যাংক উদ্বোধনের সময় আমরা বলেছি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় পরিদর্শনে গিয়ে ব্যাংক অফিসাররা গ্রাহকদের জানিয়েছেন। তারপরও উদ্যোক্তা প্রতারণার মাধ্যমে জমা স্লিপ দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তাদের ব্যাংকের স্লিপ ব্যবহার করার কোনো নিয়ম নেই। গ্রাহকদের মধ্যেও কেউ কেউ অতিরিক্ত লাভের জন্য তাকে টাকা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রাহকদের এই ধরণের লেনদেন থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন তিনি।’

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন