ছবি সংগৃহীত
নারায়ণগঞ্জে কলেজ ছাত্রের পকেটে মাদক ঢুকিয়ে আটক করতে গিয়ে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এ সময় ডিবি পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি কালো রঙের হাইএস মাইক্রোবাস ভাঙচুর করে উত্তেজিত লোকজন।
তবে ডিবি দাবি করেছে, তারা মাদক উদ্ধার অভিযানে গিয়ে মাদক কারবারিদের হামলার শিকার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার রাতে সদর উপজেলার ফতুল্লার পাগলার নিশ্চিন্তাপুর এলাকায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পাগলা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী পেচা রনি নিশ্চিন্তাপুর এলাকায় কমিউনিটি সেন্টার ব্যবসায়ী শাহজাহানের ছেলে কলেজছাত্র শাকিবুল হক সজীবের পকেটে মাদক দিয়ে টানা-হেঁচড়া করতে থাকে। এ সময় একটি কালো কালারের হাইএস মাইক্রো দিয়ে কয়েকজন সাদা পোশাকের লোকজন আসেন। তখন পেচা রনি ওই মাইক্রোতে সজীবকে উঠানোর চেষ্টা করে। এ সময় সজীব চিৎকার করলে এলাকাবাসী এগিয়ে এসে মাইক্রোবাসটি আটক করে কারণ জানতে চায়। তখন মাইক্রোবাসে আসা সাদা পোশাকধারীরা তাদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দেয়।
তখন এলাকাবাসী তাদের কাছে জানতে চায় মাদক ব্যবসায়ী পেচা রনি আপনাদের গাড়িতে সজীবকে কেন উঠালো।
এ নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে মাইক্রোবাসের চারপাশের গ্লাস ভাঙচুর করে উত্তেজিত লোকজন ডিবি সদস্যদের এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। পরে খবর পেয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ও অতিরিক্ত ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে জনতার রোষানল থেকে ডিবি সদস্যদের উদ্ধার করে। এরপর শাহজাহান ও তার ছেলে সজীবকে আটক করে পুলিশ।
এ বিষয়ে শাহজাহানের স্ত্রী ফিরোজা বেগম জানান, সজীব স্থানীয় হাজী মিছির আলী কলেজে এইচএসসিতে পড়ে। দীর্ঘদিন আগে মাদক ব্যবসায়ী পেচা রনির আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ফুটবল খেলা নিয়ে সজীবের ঝগড়া হয়। সেই বিরোধের জের ধরে মাদক ব্যবসায়ী পেচা রনি আমার ছেলে সজীবকে মাদক পকেটে দিয়ে টেনে-হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় এলাকাবাসী পেচা রনিকে আটক করার চেষ্টা করে। তখন তার সঙ্গে যে ডিবি পুলিশ ছিল বিষয়টি এলাকাবাসী জানতো না। পরে সজীব ও তার বাবা শাহজাহানকে আটক করে নিয়ে গেছে ডিবি।
নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মামুন উর রশিদ জানান, উপ-পরিদর্শক আতিক মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় কিছু মাদক ব্যবসায়ী তাদের ওপর হামলা চালিয়ে মারধরসহ গাড়ি ভাঙচুর করেছে। খবর পেয়ে ফোর্সসহ আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে কয়েকজনকে মাদকসহ আটক করেছি। পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, প্রকৃত মাদক বিক্রেতা কারা, প্রশাসন তা ভালো করেই জানে। কিন্তু প্রায় প্রতিরাতে ডিবি পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় হানা দেয়। ভোররাত পর্যন্ত চলে তাদের আটক বাণিজ্য। চাহিদা মতো টাকা দিলে ছেড়ে দেয়া হয়, আর না দিলে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। তাদের নিয়োজিত সোর্স দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তির পকেটে কৌশলে মাদক ঢুকিয়ে দেয়া হয়। পরে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ গিয়ে ওই ব্যক্তিকে তল্লাশি চালিয়ে মাদক উদ্ধার দেখায়।
এমন নাটকের শিকার হয়ে অনেক নিরপরাধ ব্যক্তি সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।