ছবিঃ মহেশখালী যাওয়ার অপেক্ষায় কক্সবাজার নৌঘাটে যাত্রীরা
কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ রুটের ৬ নম্বর ঘাঁট ও মহেশখালী ঘাঁটে চরম নৈরাজ্য চলছে। স্পিডবোডচালকরা পর্যটক ও স্থানীয় যাত্রীদের জিম্মিকে করে এই নৈরাজ্য চালাচ্ছে। তারা পর্যটকদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এর ফলে বোট না পেয়ে ঘাঁটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে স্থানীয় যাত্রীদের। এই নৈরাজ্যে পিডবোট চালকের সাথে ঘাঁটের দায়িত্বরত জেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে অনৈতিক যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, পর্যটন মৌসুমকে ঘিরে পরিকল্পিত সংকট তৈরি করে স্পিডবোটচালকরা রিজার্ভের নামে পর্যটকদের কাছ থেকে হাতিয়ে অতিরিক্ত টাকা। এভাবে এক হাজার টাকার ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। রিজার্ভ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে পর্যটকদের।
গতকাল শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) মহেশখালী থেকে ফেরার সময় কথা হলে, কুমিল্লা থেকে আসা পর্যটক জাহেদ উদ্দীন বলেন, মহেশখালী যাওয়ার সময় কোনোভাবে কাঠের বোট মিলাতে পারিনি। শেষে স্পিডবোড রিজার্ভ নিয়ে যেতে হয়েছে।
স্থানীয় যাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, গোপনে বোটচালকদের সাথে আঁতাত করে অনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে ঘাঁটের রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োাজিত কয়েকজন লোকও। অতিরিক্ত ভাড়া হাতিয়ে নিয়ে সিরিয়াল ভেঙে পর্যটক পরিবহন করায় স্থানীয় যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বোট না পাওয়ায় ঘণ্টার পর ঘণ্টার দাঁড়িয়ে থেকেও যাতায়াত করতে পারছে না স্থানীয় যাত্রীরা। এমনকি মুমূর্ষু রোগীরাও বোট পাচ্ছে না।
৬ নম্বর ঘাঁটে গিয়ে দেখা যায়, স্পিডবোডচালকরা তাদের ইচ্ছে মতো রিভার্জে পর্যটকদের বহন করে চলে যাচ্ছে। যারা রিভার্জ নিচ্ছে না পর্যটকদের হলেও তাদের বোটে তুলছে না। সেখানে স্থানীয় যাত্রীরা ধারে কাছেও যেতে পারছে না। কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে ঘাঁটের দায়িত্বরত লোকজন। এতে মারাত্মক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এসময় যাত্রীরা দাবি করেছেন, লাইনম্যান কমল নামে এক ব্যক্তি চালকদের সাথে গোপনে আঁতাত করে এ সুবিধা করে দিচ্ছে। ফলে চালকরা তাদের ইচ্ছে মতো রিজার্ভের নামে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
মহেশখালীর বেসরকারি চাকরিজীবী আমিন উল্লাহ বলেন, ‘কাজের প্রয়োজনের আমাকে সপ্তাহে তিন থেকে চার বার যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু সঠিক সময়ের কোনোভাবে যাতায়াত করতে পারছি না। ঘাটে ঘাটে এসেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। চোখের সামনে স্পিডবোটগুলো পর্যটকদের নিয়ে রিভার্জ চলে যায়। এই বিষয়ে অভিযোগ করলে ঘাটের লোকজন উল্টো ধমক দেয়।’
আরেক নিয়মিত যাত্রী আব্বাস উদ্দীন বলেন, ‘এই নৌরুটটি এখন অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। কেউ কারো কারো শুনে না। ঘাটের লোকজন ও স্পিডবোডচালকরা ইচ্ছে মতো চলছে। এর ফলে এই নৌরুট দিয়ে চলাফেরা করা এখন কেয়ামতের নমুনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
রিজার্ভের নামে পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনার পর্যটন শিল্পের বদনাম হচ্ছে। এতে কক্সবাজার সম্পর্কে নৈতিবাচক অভিজ্ঞতা নিয়ে যাচ্ছেন পর্যটকরা। কক্সবাজার অন্যদিকে দুদিকের ঘাঁটের অবস্থাপনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয় যাত্রীরাও।
ঘাঁটের এই নৈরাজ্য প্রতিহত না করলে আরো বড় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এমনকি ভুক্তভোগী স্থানীয় যাত্রীরা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই বিষয়ে ঘাঁটের ইনচার্জ ছৈয়দ করিম বলেন, ‘যাত্রীদের চাপ বাড়লে আমাদের হাতে আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না। যাত্রীদের চাপে আমরা নিরুপায় হয়ে পড়েছি। তখন যাত্রীরা যে দিকে পারে বোটে উঠার চেষ্টা করে। তবে কোনো স্পিডবোটচালক রিজার্ভ নিলে তাকে এক সপ্তাহের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জাহিদ ইকবাল বলেছেন, ‘কোনো ধরনের রিজার্ভ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করা আছে। তারপরও অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’