রোপা-আমনে বাম্পার ফলনের আশায় আছেন বগুড়া জেলার কৃষক। জমির সীমানা বোঝাতে তারা ক্ষেতের বিভিন্ন প্রান্তে আইল ব্যবহার করে থাকেন। এখন বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে গাঢ় সবুজ ধানগাছে ঢাকা পড়েছে সেই আইলগুলো। চারদিকে বিরাজ করছে গাঢ় সবুজের অপার সমারোহ।
বগুড়া উত্তরাঞ্চলের শস্যভাণ্ডার খ্যাত জেলা এটি। রকমারি ফসল ফলানোর দিকে সারাদেশে এ জেলার কৃষকদের একটা আলাদা পরিচিতও রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত ফসল ঢাকাসহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এ তালিকার শীর্ষে থাকে ধান, চাল ও নানা প্রজাতির সবজি।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) বগুড়া সদর, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রামসহ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে চলতি রোপা-আমন মৌসুমের ধানচাষ সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়।
চাষিরা জানান, এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ রোপা-আমন মৌসুমে ধান ক্ষেতে তেমন একটা প্রভাব হানতে পারেনি। আর প্রকৃতির কাছে হার মেনে নেয় না এ জেলার কৃষকরা। প্রতিবছর বন্য অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরোদমে জমিতে নেমে পড়েন তারা। জমিতে নতুন করে ফসল ফলান। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে যান কৃষকরা। চোখের সমানেই তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে জমির ধান। এখন সোনারঙা সেই ধান ঘরে তোলার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন তারা।
বর্তমানে রোপণকাল অনুযায়ী কখনো নিড়ানিও দিতে হচ্ছে। আবার প্রয়োগ করতে হচ্ছে প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশক। পানির অভাব দেখা দিলে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। বিগত রোপা আমনে উৎপাদিত ধানের ভালো দাম পাওয়ায় মনে অনেকটা আনন্দ নিয়েই কষ্টকর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।
শাজাহানপুর, সদর ও নন্দীগ্রাম উপজেলার তরিকুল ইসলাম, ময়েজ উদ্দিন, তারাজুল ইসলাম, হোসেন আলীসহ একাধিক কৃষক জানান, বংশপরমম্পরায় তারা কৃষক। কৃষিকাজই প্রধান কর্ম তাদের। বিগত মৌসুমে ধানের দাম ভালো পেয়েছেন। তাই তারা পর্যাপ্ত শ্রম দিচ্ছেন চাষের কাজে। নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা গেল রোপা-আমন মৌসুমের তুলনায় এবার অনেক বেশি জমিতে এ মৌসুমের ধান লাগিয়েছেন। রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে আমনের জমি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি রোপা-আমন মৌসুমে এ জেলার ১২টি উপজেলায় ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৮২ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমি। চাষাবাদ হয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. ফরিদুর রহমান জানান, জুলাই মাসের মধ্যবর্তী থেকে সময় থেকে কৃষকরা জমিতে এ ধান লাগিয়েছেন। অনেকে আগাম হিসেবে এর আগেও চাষাবাদ শুরু করেন। রোপণের সময়ের ওপরই ধান বা যেকোনো ফসলের বেড়ে ওঠা নির্ভর করেন।
তিনি বলেন, জেলায় চলতি মৌসুমে চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮৮৩ মেট্রিক টন। এ জেলায় কৃষকরা ব্রি ধান- ৪৯, ৩৪, ৫১, কাটারিভোগ জাতের ধান চাষ করেছেন। এসব জাতের ধানের ফলনও ভালো হবে। এতে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও কৃষকরা বেশ লাভবান হতে পারবেন।
সব মিলে চলতি মৌসুমে ধানে বাম্পার ফলনের আশা করছেন এ জেলার কৃষক।